মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে সিন্ডিকেট গড়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নতুন মামলা হচ্ছে। এতদিন ধরে দায়মুক্তির আলোচনা থাকলেও এখন আর তা নয়, বরং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত বুধবার সিআইডির মহাপরিচালক মামলার অনুমোদন দেন। আজকালের মধ্যে বনানী থানায় মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। মামলার তালিকায় রয়েছেন ৩৩ জন, যাদের মধ্যে সিন্ডিকেটের হোতা রুহুল আমিন স্বপন, সাবেক তিন এমপি, তাদের স্ত্রী ও মেয়েরা রয়েছেন।
মামলায় আসামি করা হচ্ছে স্নিগ্ধা ওভারসিস লিমিটেডের কর্ণধার সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালের মালিক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী জেসমিন মাসুদ ও মেয়ে তাসনিয়া মাসুদ, আহম্মেদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালকে। এ ছাড়া ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ও বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট আদালত রুহুল আমিন স্বপনের ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দ করে। এর মধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা ও বনানীতে ২৩১ কাঠা জমি রয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, কেবল ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল ও সংশ্লিষ্টরা অন্তত ১০০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়েছে। প্রকৃত অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে অভিযুক্তরা সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার বিপরীতে জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি টাকা আদায় করেছে। শুধু ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালই ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৩৭২ জন কর্মী পাঠিয়েছে।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২৩টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) ১২ আগস্ট এক বিবৃতিতে অভিযোগের পুনঃতদন্ত ও বিচারিক তদন্তের দাবি জানায়। তারা স্পষ্ট করে জানায়, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি জানায়, অভিবাসী শ্রমিক শোষণে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করতে মালয়েশিয়ার অনুরোধে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে। এ খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিসিএসএম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ—দুই দেশের প্রভাবশালী চক্র মিলে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। মানি লন্ডারিং আইনে নতুন করে মামলা শুরু হওয়ায় বহুদিনের দায়মুক্তির আলোচনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।