মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘী হাওর ধান উৎপাদন ও মিঠাপানির মাছের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু চলতি বছর হাওরে পানির ধীরগতিতে নামায় আমন চাষে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ৮০০ থেকে এক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।
ধান উৎপাদনে হুমকি
স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, আমন চাষের আদর্শ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে বীজতলায় চারা বুড়িয়ে যাচ্ছে, আবার রোপণযোগ্য জমিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে রয়েছে। এখনই পানি না নামলে হাজার হাজার কৃষক এই মৌসুমে আমন আবাদ করতে পারবেন না। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে, আর কৃষিজীবীদের আগামীর অভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
হাওরের গুরুত্ব ও অবকাঠামো
২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর বিস্তৃত কাউয়াদিঘী হাওরে রয়েছে ৪৮টির বেশি বিল, যা একসময় দেশীয় মাছের ভাণ্ডার ছিল। কৃষির নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে মনু প্রকল্পের আওতায় হাওরটি নেওয়া হয়। পরবর্তীতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে পাম্প হাউস ও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলেও খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় অকার্যকারিতা তৈরি হয়েছে। ফলে বর্ষায় জলাবদ্ধতা এবং শুকনো মৌসুমে সেচ সংকট— দুই বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকদের হতাশা
রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শতাধিক গ্রামের কৃষক বহু বছর ধরে প্রতিকূলতার মধ্যেও বোরো ও আমন চাষ করে আসছেন। কিন্তু এবারের জলাবদ্ধতা তাদের আরও সংকটে ফেলেছে। রায়পুর গ্রামের কৃষক আলমগীর চৌধুরী বলেন, “চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে পানি জমে বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত রোপণ করতে না পারলে জমি অনাবাদি থেকে যাবে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার ঝুঁকি কিছুটা কমলেও পানির লেভেল না নামায় হাওরের ৮০০ থেকে ৯০০ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, বর্তমানে হাওরে পানির লেভেল ৮.০৬ মিটার, যেখানে বর্ষা মৌসুমে এটি সাড়ে ৮ মিটার থাকার কথা। এর নিচে নেমে গেলে হাওরের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপসংহার
ধান ও মাছ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাউয়াদিঘী হাওরের প্রাকৃতিক স্থিতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা বারবার সমস্যার মুখে পড়ছেন। এবার আমন চাষ ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা—দুটিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।