বাংলাদেশে সংবাদ প্রচারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম এখন টেলিভিশন। দর্শক ও পাঠকরা জানেন, সংবাদ যাচাই-বাছাই করে, তথ্যসূত্র নিশ্চিত করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কুলাউড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ফেইসবুক পেইজ নিজেদের সংবাদ মাধ্যম হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তিকর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা দরকার—সব ফেইসবুক পেইজ নয়, কেবল কিছু কিছু পেইজই এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত, কিন্তু তাদের প্রভাব ক্ষতিকর।
কিছু পেইজ আছে, যাদের নাম দেখলেই মনে হয় এগুলো হয়তো প্রতিষ্ঠিত কোনো সংবাদ মাধ্যমের অংশ। বাস্তবে সেখানে সংবাদ নয়, বরং কে কবে আইফোন কিনলো, কার সাথে কোথায় ছবি তুললো, বা কে কোন খাবার খেল—এসব তুচ্ছ বিষয় “সংবাদ” নামে প্রচার হচ্ছে। সমাজ যখন চুরি-ডাকাতির মতো গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত, তখন এসব পেইজ যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা না রেখে বিনোদনমূলক ভুয়া সংবাদ ছড়ায়, তবে তা সমাজের জন্য অনিবার্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এর থেকেও উদ্বেগজনক হচ্ছে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত পেইজের নাম-ধাম নকল করার প্রবণতা। কুলাউড়ার পরিচিত একটি পেইজকে নকল করে কেউ “মনুলিপি” নামে আরেকটি পেইজ খুলেছে, যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়েছে—“গুজবের সাথে বিশ্ব প্রান্তরে।” নামের মধ্যে হাস্যরসের আড়াল থাকলেও মূলত এটি একটি ভয়ংকর প্রবণতা। কারণ, গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা কখনোই নির্দোষ কাজ নয়। বরং মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক বিভাজন, আতঙ্ক ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে। মজার ছলে শুরু হলেও এর প্রভাব হতে পারে দীর্ঘমেয়াদী ও বিপজ্জনক।
ফেইসবুক পেইজ খোলার অধিকার সবার আছে, এটি গণতান্ত্রিক অধিকারও বটে। কিন্তু এই স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বও আসে। যে কেউ চাইলে সংবাদমাধ্যম সাজতে পারে না। কারণ সংবাদ একটি আস্থা—যা সমাজকে সত্য তথ্য দিয়ে শক্তিশালী করে। সংবাদমাধ্যমের কাজ হলো মানুষের সমস্যাগুলো সামনে আনা, সমাধানের পথ খোঁজা এবং ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা। অথচ কিছু কিছু পেইজ এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরিবর্তে গুজব, তুচ্ছ বিনোদন আর মিথ্যা প্রচারে ব্যস্ত।
এখানে প্রত্যেক ব্যবহারকারীরও ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি সচেতন না হই, যদি যাচাই না করি কোন পেইজে সত্য সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে আর কোনটিতে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তাহলে বিভ্রান্তি রোধ করা সম্ভব নয়। মিথ্যা তথ্যও ভাইরাসের মতো—একবার ছড়িয়ে গেলে তা থামানো কঠিন হয়ে পড়ে।
অতএব, কুলাউড়ার কিছু ফেইসবুক পেইজের এই ভ্রান্ত পথে হাঁটা বন্ধ করতে হলে সকলের দায়িত্বশীল হতে হবে। সংবাদকে সংবাদ হিসেবে, আর বিনোদনকে বিনোদন হিসেবে আলাদা করা জরুরি। নাম বাছাইয়ের সময় তিনবার ভাবা দরকার—আপনার নাম যেন কারও কাছে বিভ্রান্তি তৈরি না করে। জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের নাম বা লোগো নকল করা বন্ধ করতে হবে। আর পাঠককেও সাবধান হতে হবে, যাতে গুজব ও সংবাদকে এক করে না ফেলেন।